আকাশ ধাক্কা সামলিয়ে অপেক্ষায় দিন সময়গুলো বিয়ের আয়োজন
বাড়ির বাইরে এসে কাজ নেই, কলেজ বন্ধ ঠিক যেনো দুর্ভিক্ষের পূর্ব মূহুর্ত । ঠিক এ-সময়েই দেখা হয় এক বড় ভাইর সাথে যিনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা। দুজনের আলাপচারিতায় বেশ ভাব জমে উঠে । গল্পে গল্পে হঠাৎ বলে দিল তার এই দুর্ভিক্ষের কথা , বড় ভাই শুনে তাকে তার অফিসের কাজে কিছু সাহায্য করার কথা বললেন। যেহেতেু এসময়ে কোন কাজ নেই তাই একবাক্যে রাজি ও হয়ে গেলো, ও তার নামই তো বলা হয় নি। সে হলো সাগর চন্দ্র । যাহোক বড়ভাইর কথামতো তার দুদিন পরই প্রথমদিন সে বড়ভাইর অফিসে গেলো। অফিসে আরো একজন কর্মকর্তা ও দুজন কর্মচারী ছিলো। অবশেষে অনেকদিনের দুর্ভিক্ষের পরে কিছুটা স্বস্তি ফিরলো কিছু একটা কাজের মধ্যে দিয়ে অন্তত বোরিং সময়টা বেশ্ ভালোই কাটতে লাগলো। একদিন-দুদিন করে সময় বাড়তে থাকে জমতে থাকে নতুন অভিজ্ঞতা । এরই মধ্যে টুকটাক অনেক কাজ শিখে ফেললো সাগর। কাজের জন্য মোটামুটি প্রশংসা কুড়িয়ে সবার পছন্দের পাত্রের জায়গায় নিজের নাম লিখিয়ে নিয়েছেন। অফিসের কাজের ফাঁকে চা বিরতি কিংবা মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সোশাল সাইটে ঢু মারতে ভুলতেন না সাগর। সবমিলিয়ে একটা নতুন কাজ ও নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ একদিন ফেসবুকের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এ দেখা মিললো “মুকুন্দ মুরারীর” । সাগর আগে থেকেই একটু একচেটিয়া বা একঘুঁয়ে টাইপের । সবকিছুতে সে নিজের মতো থাকতে পছন্দ করে , নিজের মতো করে কাজ করে । অপরিচিত কারো সাথে তেমন মিশে না, অপরিচিত কারো সাথে হুট করে ভাব ও জমায় না আর কারো সাথে একবার ভাব জমে গেলে তারজন্য পুরো পাগলপারা। দুপুরে মুকুন্দ মুরারীর বন্ধুত্বের অনুরোধ আর বিকাল হতে হতেই বার্তা আদান-প্রদান শুরু হয়ে যায়। একদিন যায় দুদিন যায় ধীরে ধীরে দুজনের আলাপচারিতা বাড়তে থাকে জানাশোনা বাড়তে থাকে । দুজনের আলাপচারিতা এতই বেড়ে যায় যে এর মধ্যে মুকুন্দ মুরারী-সাগরের সাথে দেখা করার ও সিদ্ধান্ত ও নেয়। এদিকে দুজনের ভাব জমতে থাকে আর অন্যদিকে অপেক্ষায় অপেক্ষায় দুজনের না বলা চাহিদা বাড়তে থাকে। দুজনের চাহিদা, কর্মব্যস্ততা এর ফাঁকে উঁকি দিয়ে চলে দিন। এভাবে সময় কাটতে থাকে দুজনার আবেগ-আক্ষেপ বাড়তে থাকে। আবেগ-আক্ষেপের বাড়াবাড়ির মাঝেই চলে আসে মরনব্যাধি করোনা বন্ধ হয়ে যায় দুজনের কর্মব্যাস্ততা। অলস সময় দুজন দুজনের দোহে সময় কাটায় আর একে অপরের অপেক্ষায় দিন পার করে । একদিকে করোনার তান্ডব আর অন্যদিকে দুজনার মিষ্টি সময় কাটতে থাকে এক অপরের আলাপচারিতায়। করোনার সুযোগে “মুকন্দ মুরারীর” সুভদ্রা(ছদ্মনাম) এর বড় ভাই বাড়িতে চলে আসেন , দুজনার ভালো সময়গুলো ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকে। সুভদ্রার ভাই এর জন্য মেয়ে দেখা হয় করোনার কারণে ছোটোখাটো অনুষ্ঠান করে বিয়ের আয়োজন করা হয়,আর সাগরের সাথে যোগাযোগ কমতে থাকে সুভদ্রার । মাস কয়েক পর হুট করে সুভদ্রার জন্য ও ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় সুভদ্রার । এসবের কিছুই জানতো না সাগর , যোগাযোগের সমস্যার কারণে সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই নিতে থাকে সাগর। দীর্ঘদিন পর সুভদ্রাকে অনলাইনে পায় সাগর আগের মতোই কল দিয়ে খোঁজ খবর নিতে চায় সাগর। কল ধরতেই সাগর হতভম্ব হয়ে গেলো শাখা-সিঁধুর পরে সুভদ্রা বসে আসে ক্যামেরার সামনে । কথা বলতে বলতে জানা গেলো এতাদিনের ব্যাস্ততম দিনরাতের গল্প। বেশ সময় কেটে গেলো দুজনার বিচ্ছিন্ন অবস্থাতে তারপর যখন কথা হলো এমন একটা অবস্থা হবে এর বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারে নি সাগর । মনে মনে কতোকিছু ভাবতেছিলো সাগর, যে সাগর কারো সাথে অতটা মিশতো না সে সাগর আজ কারো জন্য এতা উদগ্রীব কেনো , কেনোই বা তার নতুন পোশাক, নতুন বেশ, নতুন এই সাজকে মেনে নিতে পারছে না!! তবে কি সাগর সুভদ্রাকে ভালোবেসে ফেলেছে ?
একটা ঘর, চারটা দেওয়াল- কে বললো আমি একা থাকি!
একা একার মন্ত্র পড়ে...... তোমার মন কে জড়িয়ে রাখি।
যাহোক যা হবার তা তো হয়েই গেছে এখন আর তার জন্য আপসোস বা অনুশোচনা করে কোন ফল হবে না তারচেয়ে যা হয়েছে তাকে মেনে নিয়ে একে অন্যের মঙ্গল কামনা করা ছাড়া কোন কিছু করাটাই অযোক্তিক। অনেকদিন পর দুজনার কথা হচ্ছে তার মধ্যেও এমন একটা বিব্রতকর অবস্থা তাতে সাগরের কথা বলতে ইচ্ছে করতেছিলো না। তারপরেও সৌজন্যতাবোধ কিংবা এতদিনের আবেগ-আক্ষেপের জন্য কথা বলা চালিয়ে যান। জানতে চান সুভদ্রার কাছে কেমন আছে এখন, কেমন যাচ্ছে নতুন ঘর , নতুন পরিবেশ , নতুন মানুষ। সুভদ্রা সবমিলিয়ে এককথায় উত্তর দিলো ভালো নেই, আপনার কাছে থাকলে কি খুব ক্ষতি হতো আপনার?? একথা শোনবার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সাগর, ধাক্কা সামলিয়ে অন্য কথা বলা শুরু করলো সাগর । সুভদ্রা যেনো কিছুতেই সাগর থেকে বের হতে পারছিলো না, বারংবার সে সাগরের সাথে কাটানো ভালো সময়গুলোর কথা বলতে থাকে , করতে থাকে পুরোনো স্মৃতিচারন। সাগর বুঝাতে থাকে তার পরিবার যা করছে হয়তো সুভদ্রার ভালোর জন্যই করেছেন। যা হয়ে গেছে তাকে মেনে নিয়ে যেন ভালো করে নতুন সংসার , নতুন ঘর, নতুন মানুষকে নিয়ে ভালোভাবে চলে। অনেকদিন পর সুভদ্রার সাথে অনেক কথা হলো সাগরের এর মধ্যে ওর শাশুড়ি মা ভাত খেতে চায় ভাত দেবার জন্য বিদায় নেয় সুভদ্রা । এর পর অনেক দিন-মাস কেটে যায় দুজনার কারো সাথে কারো কথা হয় না। মাঝেমধ্যে সাগর সুভদ্রাকে বার্তা পাঠায় অপরপাশ থেকে কোন প্রতিউত্তর আসে না , কখনো দেখা যায় বার্তা জমে আছে দেখার সময় ও হয়তো হয়ে উঠে নি। আবার কখনো বা আবেগঘন ফিরতি বার্তা আসে যা সাগরের মনে একচিলতে বেদনার জন্ম দিয়ে যায় আবার কখনো বা মনে হয় এর জন্য বেদনার কি আছে যে মানুষটার সাথে কথনো সামনে বসে দেখা হয় নি, কথা হয় নি, দুজনার কারো হাত ধরে কারো হাঁটা হয় নি সে মানুষটার জন্য বেদনার জন্ম দিয়ে কি লাভ। অবশেষে আজ তিন বৎসর হতে চললো দুজনার কারো সাথে কারো কোন যোগাযোগ নেই।
“রত্ন চিনিয়া মনে করে ওরা রত্নাকরেও চেনে!ডুবে নাই তারা অতল গভীর রত্ন-সিন্ধুতলে,শাস্ত্র না ঘেঁটে ডুব দাও, সখা, সত্য-সিন্ধু-জলে।” - (কাজী নজরুল ইসলাম)