Saturday, 11 May 2024

দুষ্টু মিষ্টি প্রেম


- কি রে মেয়ে পছন্দ হয়ছে? (মা)


- হ্যা হয়ছে (বাধ্য হয়ে বললাম। কিন্তু আমি এখনো


মেয়ের ছবিই দেখিনি)


- তাহলে তাড়াতাড়ি চলে আয়। আমরা আর সময় নষ্ট করতে


চাই না।


- ঠিক আছে আমি বাড়ি আসছি।


- বাড়ি আসবি কেন? তোর কাকুর বাড়ি আয়।


আমরা সবাই তোর কাকুর বাড়ি আছি।


- কেন? ওখানে কেন?


- মেয়ের বাড়ি এখানেই। তাই আমরা সবাই তোর


কাকার বাড়ি আছি। তুই আজই চলে আয়। কালকেই


আমরা মেয়ে দেখতে যাবো।


- কালকেই!!!


- হুম


- তা আমাকেও কি যেতে হবে?


- গাধা,,তোর হবু বউকে তুই দেখবি না?


- আচ্ছা। আমি আসছি।


ফোনটা কেটে দিলাম। আমার কোন ইচ্ছে নেই বিয়ে


করার। কিন্তু বাড়ির সবাই যেভাবে চেপে ধরেছে রাজি


না হয়ে আর উপায় নেই। তারপরও বিয়ে ভাঙার একটা


প্লান করেছি। কিন্তু মনে হয়না তা সফল হবে।


বাসে বসে আছি। আমার কাছে জার্নি একদম ভাল লাগে


না। তবুও প্রতি মাসেই এই জার্নি করতে হয়।


- excuse me এটা আমার সিট।


একটা মেয়ে বললো। জানলার পাশের সিটটা ছেড়ে


দিলাম। বাস চলতে শুরু করলো। একটু পরে মেয়েটা


আমাকে বললো


- আপনার নাম কি?


- রাজ। আপনার নাম?


- দিপা


- বাহ। ভালো নাম। কি করেন আপনি?


- পড়ছি। আপনি?


- আমি পড়ি না।


- কেন?


- ভাল লাগে না তাই। আপনি কিসে পড়েন?


- অনার্স ৩য় বর্ষ।


- ভালো।


- আপনি কোথায় যাচ্ছেন?


- তালপুর।


- বেড়াতে যাচ্ছেন?


- না কিছুদিনের মধ্যে আমার বিয়ে। তাই মেয়ে দেখতে


যাচ্ছি।


কি আজব মেয়েরে বাবা। আমার বিয়ের কথা শুনে চুপি


চুপি হাসছে। এতে হাসার কি আছে? লাইফে প্রথম


বার বিয়ে করছি। এটা শুনে যদি কেউ হাসে তাহলে


কান্না করা ছাড়া কোন উপায় নেই।


- আপনি কই যাচ্ছেন?


- আমিও তালপুয যাচ্ছি।


- ও তাই???


- হুম,,,,


- বেড়াতে যাচ্ছেন?


- না। আসলে আমারও কিছুদিনের মধ্যে বিয়ে। তাই


যাচ্ছি।


- ও


- তো আপনি মেয়ে দেখেছেন?


- নাহ। দেখতেই তো যাচ্ছি।


- না মানে ছবি দেখেন নি?


- না দেখি নি।


- কেন?


- আসলে আমি বিয়েটা করতে চায়ছিলাম না। বাধ্য হয়ে


করছি।


- ও!! মেয়ের নাম জানেন?


- নাহ


- ওমা যার সাথে আপনার বিয়ে হচ্ছে তার নামও জানেন


না??


- কেমন করে জানবো? কেউ কি বলছে আমাকে যে তোর


বউয়ের নাম ওমুক।


এ কথা শুনে মেয়েটি হাসলো।


-আচ্ছা আপনি বিয়ে করতে চান না কেন?


- ভালো লাগে না বিয়ে করতে।


- কিই। কটা বিয়ে করছেন যে অরুচি ধরে গেছে?


- আরে তা না। আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছাই নেই।


- হুম। আমার কথা বাদ দিন। আপনার কথা বলুন। ছেলে


দেখেছেন?


- সরাসরি দেখিনি। ছবি দেখেছি।


- ছেলে পছন্দ হয়ছে?


- হ্যা মোটামুটি।


এভাবে মেয়েটার সাথে অনেক কথা হলো। মেয়েটাকে


পুরো অন্যরকম মনে হলো। এখনকার মেয়েরা অপরিচিত


ছেলেদের সাথে কথাই বলে না। আমি নিজেই ফেসবুকে


মেয়েদের সাথে কথা বলতে গিয়ে কত ব্লক খেয়ছি তার


হিসাব নেই। আর এই মেয়ে আমার সাথে কথা


বলেই চলেছে। তার ফেসবুক আইডিও দিলো। মেয়েটাকে


অনেক ভাল লাগলো আমার। দেখতেও অনেক সুন্দর। ধুর


কি সব বাজে বলছি। একটা মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি আর


বাসে আর একটা মেয়েকে পছন্দ করছি। তাও আবার


বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়ে ।


তালপুর পৌছে মেয়েটাকে আর দেখতে পেলাম না।


অটো নিয়ে কাকুর বাড়ি চলে আসলাম। বাড়ি এসে


দেখলাম এখানে বিয়ে বাড়ির মতো হৈ চৈ শুরু হয়ছে।


আমি যাওয়া মাত্রই আমাকে যেভাবে সবাই ঘিরে


ধরলো মনে হচ্ছে আজই আমার বিয়ে। সন্ধ্যার সময় রুমে বসে আছি। একটা আননোন নাম্বার


থেকে কল আসলো


- হ্যালো


কোনো কথা বলছে না।


- হ্যালো!!!


- হ্যালো........রাজ বলছেন?


- জ্বি বলছি। কে আপনি?


- আমি মেঘ


- কোন মেঘ? এ নামে তো আমি কাউকে চিনি না।


- আপনার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়ছে। আমি সে।


- ও। জ্বি বলুন......কি বলবেন


- (একটু চুপ থেকে) আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়ছে।


- এখনো তো আমি আপনাকে দেখিনি। কি করে বলবো?


চুপ করে আছে। কোন কথা নেই। এক সময় ফোন কেটে


গেলো।


রাতের দিকে কেমন যেন খারাপ লাগতে শুরু করলো।


কাকে যেন মিস করছি। বাসে আসা মেয়েটার কথা মনে


পড়ছে। নাহ এসময় বিয়ে করলে জীবনটাই মাটি হয়ে


যাবে। যে করেই হোক বিয়েটা আটকাতে হবে। মায়ের


সাথে কথা বলতে হবে। কিন্তু মা খুব ব্যস্ত। আমার


সাথে কথা বলার টাইম নেই। তাই সুযোগের অপেক্ষায়


থাকলাম।


- মা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।


- হুম বল


- আমি কালকে মেয়ে দেখতে যেতে পারবো না।


- কেন?


- আমি এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।


- কেন? সমস্যা কি?


- আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি।


- সেটা আগে বলিসনি কেন?


- আরে আমি তো কালকেই মেয়েটাকে পছন্দ করলাম।


- ঠিক আছে আপাতত কালকে মেয়ে দেখতে যাই। এসব


পরে দেখা যাবে।


মেয়ের বাড়ি বসে আছি। মেয়েটি আমার সামনেই বসে


আছে। কিন্তু একবারও আমি মেয়েটার দিকে তাকায়নি।


মাথা নিচু করে আছি। মা বললো


-এই একবার মেয়েটাকে দেখ না। একেবারে পরির মতো


দেখতে।


- আমার পছন্দ হয়নি


- আরে আগে তো মেয়েটাকে দেখ


এমন সময় মেয়েটির জামাইবাবু বললো


-ওদেরকে একটু একা কথা বলতে দেওয়া দরকার।


সবাই তার কথায় একমত হলো। মেয়েটা উঠে চলে গেলো।


আমিও বাধ্য হয়ে পিছুপিছু গেলাম। এখনো মুখ দেখিনি।


একটা ঘরে ঢুকে আমি প্রথম মেয়েটাকে দেখলাম।


দেখেই তো আমার চোখ আকাশে উঠে গেলো। নিজের


চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। এ তো সেই


বাসের মেয়েটা। তাহলে কি এর সাথেই আমার বিয়ে


হচ্ছে।


- তু তুমি......মানে আপনি?


- হ্যাঁ আমি।


- কিন্তু কি করে সম্ভব?


- আসলে বাসে আমি আপনাকে পরিচয় দিনি।


- কেন? (খানিকটা রেগে)


- লজ্জা লাগছিলো তাই। আর নিজের হবু ইয়ের সাথে


একটু মজা করতে চায়ছিলাম।


- হুম!! অচেনা একটা মানুষের সাথে কথা বলতে লজ্জা


লাগে না। আর নিজের পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে?


- ওমা অচেনা হবে কেন। আমি তো আপনার ছবি দেখছি


তাই আপনার সাথে কথা বলেছি। অন্য কেউ থাকলে কথা


বলতাম না।


- কিন্তু বাসে আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনার নাম


দিপা । ফোনে বলেছেন মেঘ। কোনটা


আসল নাম?


- বলবো না। যে ছেলে নিজের হবু ইয়ের নাম জানে না


তাকে আমি বলতে যাবো কেন?


- ও তারমানে আপনি ইচ্ছে করেই আমাকে মিথ্যা নাম


বলেছেন?


- জ্বি না। দুটোই আমার নাম ।


- ইসস কেন যে তোমার...মানে আপনার ছবি দেখলাম না।


এখন কি হবে বলো তো?


- কি আবার হবে...বিয়ে হবে। (লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে)


- কিন্তু আমি তো মাকে বলেছি আমার মেয়ে পছন্দ হয়নি।


- ওহ (মন খারাপ করে)


- আরে তোমার জন্যই তো বলেছি মেয়ে পছন্দ হয় নি।


- মানে?


- মানে হচ্ছে বাসে দিপাকে আমার পছন্দ হয়ছিলো। তাই মেঘকে বিয়ে করতে চায়নি।


- হাহাহাহাহাহাহা।


- এখন তো দুজনকেই পছন্দ হয়ছে কাকে বিয়ে করি?


- যেকোন একজনকে বিয়ে করলেই হবে।


তার সাথে আর কথা বলার সময় পেলাম না। এক সপ্তাহ


পর আমাদের বিয়ে ঠিক হলো।


...


...


...


এক সপ্তাহ পরঃ


রাত ১১টা ১০ মিনিট। ছাদে দাঁড়িয়ে আমি সিগারেট


টানছি। না না আমি সিগারেট খাই না। খুব ভাল ছেলে


আমি। আসলে মেঘের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।


আজ আমাদের ইয়ের রাত...মানে ইয়ের রাত। বোঝেনই তো।


এটা আমার জীবনের প্রথম ইয়ের রাত তাই খুব টেনশন


হচ্ছে। বন্ধুদের কাছে শুনেছি সিগারেট নাকি সব টেনশন


দূর করে দেয়। কিন্তু বন্ধুদের থিউরি আজ ভুল প্রমানিত


হচ্ছে। টেনশন দূর না হয়ে আরো বাড়তেছে।


- কি রে তুই এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে কি করছিস?


- (সিগারেট লুকিয়ে) কিছু না মা এমনি দাঁড়িয়ে


আছি।


- তাড়াতাড়ি ঘরে যা। বউমা একাই বসে আছে।


- আচ্ছা ঠি...ঠিক আছে।


ছাদ থেকে সোজা আমার ঘরের সামনে আসলাম। এবার


টেনশন দিগুন হয়ে গেছে। দরজার সামনে দশ মিনিট


পায়াচারি করলাম। হঠাৎ ঘরের দরজা খুলে গেলো।


মেঘ রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।


- কি ব্যাপার আপনি ঘরে ঢুকবেন না আমি দরজা


লাগিয়ে দেব?


- ইয়ে দরজা লাগিয়ে দাও...মানে দিন।


আবার সেই রাগি লুক দিল। আমি কিছু না বলে ঘরে ঢুকে


গেলাম। এবার একটু সাহস নিয়ে বললাম


- আই লাভ ইউ


- কি বললেন?


- কিছু না।


- আমি শুনেছি কি বলেছেন। এভাবে বললে হবে না।


ভালোভাবে প্রপোজ করুন।


- এখন?


- হুম


- কালকে করি?


- নাহ এখনই করতে হবে।


- আচ্ছা ঠিক আছে আমার হাতটা একটু শক্ত করে ধরো।


- না পারবো না।


- তাহলে আমিও প্রপোজ করতে পারবো না।


- আচ্ছা ধরলাম


- ছোটবেলায় শাশুড়িমা তোমাকে হরলিক্স খাওয়ায়নি?


- কেন?


- তোমাকে শক্ত করে ধরতে বলেছে, স্পর্শ করতে বলিনি।


- আচ্ছা ধরলাম।


- আচ্ছা


- কি আচ্ছা? করুন প্রপোজ।


- হুম করছি তো। মেঘ


- হুম


- মেঘ


- হুম


- আমি...


- হুম


- তো...তো...তোমাকে...


- হুম


- তোমাকে...


- তারপর?


- তোমাকে...


- তোমাকে কি?


- আমি একটু জল খাবো, একটু জল দাও...


মেঘ হাত ছেড়ে দিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে গেলো।


আমিও গিয়ে শুলাম। এরপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।





No comments:

Post a Comment

অচিন মানুষ

   আকাশ ধাক্কা সামলিয়ে অপেক্ষায় দিন সময়গুলো বিয়ের আয়োজন  বাড়ির বাইরে এসে কাজ নেই, কলেজ বন্ধ ঠিক যেনো দুর্ভিক্ষের পূর্ব মূহুর্ত । ঠি...