Saturday, 11 May 2024

অচিন মানুষ


 

 আকাশ ধাক্কা সামলিয়ে অপেক্ষায় দিন সময়গুলো বিয়ের আয়োজন 

বাড়ির বাইরে এসে কাজ নেই, কলেজ বন্ধ ঠিক যেনো দুর্ভিক্ষের পূর্ব মূহুর্ত । ঠিক এ-সময়েই দেখা হয় এক বড় ভাইর সাথে যিনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা। দুজনের আলাপচারিতায় বেশ ভাব জমে উঠে । গল্পে গল্পে হঠাৎ বলে দিল তার এই দুর্ভিক্ষের কথা , বড় ভাই শুনে তাকে তার অফিসের কাজে কিছু সাহায্য করার কথা বললেন। যেহেতেু এসময়ে কোন কাজ নেই তাই একবাক্যে রাজি ও হয়ে গেলো, ও তার নামই তো বলা হয় নি। সে হলো সাগর চন্দ্র । যাহোক বড়ভাইর কথামতো তার দুদিন পরই প্রথমদিন সে বড়ভাইর অফিসে গেলো। অফিসে আরো একজন কর্মকর্তা ও দুজন কর্মচারী ছিলো। অবশেষে অনেকদিনের দুর্ভিক্ষের পরে কিছুটা স্বস্তি ফিরলো কিছু একটা কাজের মধ্যে দিয়ে অন্তত বোরিং সময়টা বেশ্ ভালোই কাটতে লাগলো। একদিন-দুদিন করে সময় বাড়তে থাকে জমতে থাকে নতুন অভিজ্ঞতা । এরই মধ্যে টুকটাক অনেক কাজ শিখে ফেললো সাগর। কাজের জন্য মোটামুটি প্রশংসা কুড়িয়ে সবার পছন্দের পাত্রের জায়গায় নিজের নাম লিখিয়ে নিয়েছেন। অফিসের কাজের ফাঁকে চা বিরতি কিংবা মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সোশাল সাইটে ঢু মারতে ভুলতেন না সাগর। সবমিলিয়ে একটা নতুন কাজ ও নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ একদিন ফেসবুকের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এ দেখা মিললো “মুকুন্দ মুরারীর” । সাগর আগে থেকেই একটু একচেটিয়া বা একঘুঁয়ে টাইপের । সবকিছুতে সে নিজের মতো থাকতে পছন্দ করে , নিজের মতো করে কাজ করে । অপরিচিত কারো সাথে তেমন মিশে না, অপরিচিত কারো সাথে হুট করে ভাব ও জমায় না আর কারো সাথে একবার ভাব জমে গেলে তারজন্য পুরো পাগলপারা। দুপুরে মুকুন্দ মুরারীর বন্ধুত্বের অনুরোধ আর বিকাল হতে হতেই বার্তা আদান-প্রদান শুরু হয়ে যায়। একদিন যায় দুদিন যায় ধীরে ধীরে দুজনের আলাপচারিতা বাড়তে থাকে জানাশোনা বাড়তে থাকে । দুজনের আলাপচারিতা এতই বেড়ে যায় যে এর মধ্যে মুকুন্দ মুরারী-সাগরের সাথে দেখা করার ও সিদ্ধান্ত ও নেয়। এদিকে দুজনের ভাব জমতে থাকে আর অন্যদিকে অপেক্ষায় অপেক্ষায় দুজনের না বলা চাহিদা বাড়তে থাকে। দুজনের চাহিদা, কর্মব্যস্ততা এর ফাঁকে উঁকি দিয়ে চলে দিন। এভাবে সময় কাটতে থাকে দুজনার আবেগ-আক্ষেপ বাড়তে থাকে। আবেগ-আক্ষেপের বাড়াবাড়ির মাঝেই চলে আসে মরনব্যাধি করোনা বন্ধ হয়ে যায় দুজনের কর্মব্যাস্ততা। অলস সময় দুজন দুজনের দোহে সময় কাটায় আর একে অপরের অপেক্ষায় দিন পার করে । একদিকে করোনার তান্ডব আর অন্যদিকে দুজনার মিষ্টি সময় কাটতে থাকে এক অপরের আলাপচারিতায়। করোনার সুযোগে “মুকন্দ মুরারীর” সুভদ্রা(ছদ্মনাম) এর বড় ভাই বাড়িতে চলে আসেন , দুজনার ভালো সময়গুলো ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকে। সুভদ্রার ভাই এর জন্য মেয়ে দেখা হয় করোনার কারণে ছোটোখাটো অনুষ্ঠান করে বিয়ের আয়োজন করা হয়,আর সাগরের সাথে যোগাযোগ কমতে থাকে সুভদ্রার । মাস কয়েক পর হুট করে সুভদ্রার জন্য ও ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় সুভদ্রার । এসবের কিছুই জানতো না সাগর , যোগাযোগের সমস্যার কারণে সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই নিতে থাকে সাগর। দীর্ঘদিন পর সুভদ্রাকে অনলাইনে পায় সাগর আগের মতোই কল দিয়ে খোঁজ খবর নিতে চায় সাগর। কল ধরতেই সাগর হতভম্ব হয়ে গেলো শাখা-সিঁধুর পরে সুভদ্রা বসে আসে ক্যামেরার সামনে । কথা বলতে বলতে জানা গেলো এতাদিনের ব্যাস্ততম দিনরাতের গল্প। বেশ সময় কেটে গেলো দুজনার বিচ্ছিন্ন অবস্থাতে তারপর যখন কথা হলো এমন একটা অবস্থা হবে এর বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারে নি সাগর । মনে মনে কতোকিছু ভাবতেছিলো সাগর, যে সাগর কারো সাথে অতটা মিশতো না সে সাগর আজ কারো জন্য এতা উদগ্রীব কেনো , কেনোই বা তার নতুন পোশাক, নতুন বেশ, নতুন এই সাজকে মেনে নিতে পারছে না!! তবে কি সাগর সুভদ্রাকে ভালোবেসে ফেলেছে ?


একটা ঘর, চারটা দেওয়াল- কে বললো আমি একা থাকি!


একা একার মন্ত্র পড়ে...... তোমার মন কে জড়িয়ে রাখি।




যাহোক যা হবার তা তো হয়েই গেছে এখন আর তার জন্য আপসোস বা অনুশোচনা করে কোন ফল হবে না তারচেয়ে যা হয়েছে তাকে মেনে নিয়ে একে অন্যের মঙ্গল কামনা করা ছাড়া কোন কিছু করাটাই অযোক্তিক। অনেকদিন পর দুজনার কথা হচ্ছে তার মধ্যেও এমন একটা বিব্রতকর অবস্থা তাতে সাগরের কথা বলতে ইচ্ছে করতেছিলো না। তারপরেও সৌজন্যতাবোধ কিংবা এতদিনের আবেগ-আক্ষেপের জন্য কথা বলা চালিয়ে যান। জানতে চান সুভদ্রার কাছে কেমন আছে এখন, কেমন যাচ্ছে নতুন ঘর , নতুন পরিবেশ , নতুন মানুষ। সুভদ্রা সবমিলিয়ে এককথায় উত্তর দিলো ভালো নেই, আপনার কাছে থাকলে কি খুব ক্ষতি হতো আপনার?? একথা শোনবার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সাগর, ধাক্কা সামলিয়ে অন্য কথা বলা শুরু করলো সাগর । সুভদ্রা যেনো কিছুতেই সাগর থেকে বের হতে পারছিলো না, বারংবার সে সাগরের সাথে কাটানো ভালো সময়গুলোর কথা বলতে থাকে , করতে থাকে পুরোনো স্মৃতিচারন। সাগর বুঝাতে থাকে তার পরিবার যা করছে হয়তো সুভদ্রার ভালোর জন্যই করেছেন। যা হয়ে গেছে তাকে মেনে নিয়ে যেন ভালো করে নতুন সংসার , নতুন ঘর, নতুন মানুষকে নিয়ে ভালোভাবে চলে। অনেকদিন পর সুভদ্রার সাথে অনেক কথা হলো সাগরের এর মধ্যে ওর শাশুড়ি মা ভাত খেতে চায় ভাত দেবার জন্য বিদায় নেয় সুভদ্রা । এর পর অনেক দিন-মাস কেটে যায় দুজনার কারো সাথে কারো কথা হয় না। মাঝেমধ্যে সাগর সুভদ্রাকে বার্তা পাঠায় অপরপাশ থেকে কোন প্রতিউত্তর আসে না , কখনো দেখা যায় বার্তা জমে আছে দেখার সময় ও হয়তো হয়ে উঠে নি। আবার কখনো বা আবেগঘন ফিরতি বার্তা আসে যা সাগরের মনে একচিলতে বেদনার জন্ম দিয়ে যায় আবার কখনো বা মনে হয় এর জন্য বেদনার কি আছে যে মানুষটার সাথে কথনো সামনে বসে দেখা হয় নি, কথা হয় নি, দুজনার কারো হাত ধরে কারো হাঁটা হয় নি সে মানুষটার জন্য বেদনার জন্ম দিয়ে কি লাভ। অবশেষে আজ তিন বৎসর হতে চললো দুজনার কারো সাথে কারো কোন যোগাযোগ নেই।




“রত্ন চিনিয়া মনে করে ওরা রত্নাকরেও চেনে!ডুবে নাই তারা অতল গভীর রত্ন-সিন্ধুতলে,শাস্ত্র না ঘেঁটে ডুব দাও, সখা, সত্য-সিন্ধু-জলে।” - (কাজী নজরুল ইসলাম)

দুষ্টু মিষ্টি প্রেম


- কি রে মেয়ে পছন্দ হয়ছে? (মা)


- হ্যা হয়ছে (বাধ্য হয়ে বললাম। কিন্তু আমি এখনো


মেয়ের ছবিই দেখিনি)


- তাহলে তাড়াতাড়ি চলে আয়। আমরা আর সময় নষ্ট করতে


চাই না।


- ঠিক আছে আমি বাড়ি আসছি।


- বাড়ি আসবি কেন? তোর কাকুর বাড়ি আয়।


আমরা সবাই তোর কাকুর বাড়ি আছি।


- কেন? ওখানে কেন?


- মেয়ের বাড়ি এখানেই। তাই আমরা সবাই তোর


কাকার বাড়ি আছি। তুই আজই চলে আয়। কালকেই


আমরা মেয়ে দেখতে যাবো।


- কালকেই!!!


- হুম


- তা আমাকেও কি যেতে হবে?


- গাধা,,তোর হবু বউকে তুই দেখবি না?


- আচ্ছা। আমি আসছি।


ফোনটা কেটে দিলাম। আমার কোন ইচ্ছে নেই বিয়ে


করার। কিন্তু বাড়ির সবাই যেভাবে চেপে ধরেছে রাজি


না হয়ে আর উপায় নেই। তারপরও বিয়ে ভাঙার একটা


প্লান করেছি। কিন্তু মনে হয়না তা সফল হবে।


বাসে বসে আছি। আমার কাছে জার্নি একদম ভাল লাগে


না। তবুও প্রতি মাসেই এই জার্নি করতে হয়।


- excuse me এটা আমার সিট।


একটা মেয়ে বললো। জানলার পাশের সিটটা ছেড়ে


দিলাম। বাস চলতে শুরু করলো। একটু পরে মেয়েটা


আমাকে বললো


- আপনার নাম কি?


- রাজ। আপনার নাম?


- দিপা


- বাহ। ভালো নাম। কি করেন আপনি?


- পড়ছি। আপনি?


- আমি পড়ি না।


- কেন?


- ভাল লাগে না তাই। আপনি কিসে পড়েন?


- অনার্স ৩য় বর্ষ।


- ভালো।


- আপনি কোথায় যাচ্ছেন?


- তালপুর।


- বেড়াতে যাচ্ছেন?


- না কিছুদিনের মধ্যে আমার বিয়ে। তাই মেয়ে দেখতে


যাচ্ছি।


কি আজব মেয়েরে বাবা। আমার বিয়ের কথা শুনে চুপি


চুপি হাসছে। এতে হাসার কি আছে? লাইফে প্রথম


বার বিয়ে করছি। এটা শুনে যদি কেউ হাসে তাহলে


কান্না করা ছাড়া কোন উপায় নেই।


- আপনি কই যাচ্ছেন?


- আমিও তালপুয যাচ্ছি।


- ও তাই???


- হুম,,,,


- বেড়াতে যাচ্ছেন?


- না। আসলে আমারও কিছুদিনের মধ্যে বিয়ে। তাই


যাচ্ছি।


- ও


- তো আপনি মেয়ে দেখেছেন?


- নাহ। দেখতেই তো যাচ্ছি।


- না মানে ছবি দেখেন নি?


- না দেখি নি।


- কেন?


- আসলে আমি বিয়েটা করতে চায়ছিলাম না। বাধ্য হয়ে


করছি।


- ও!! মেয়ের নাম জানেন?


- নাহ


- ওমা যার সাথে আপনার বিয়ে হচ্ছে তার নামও জানেন


না??


- কেমন করে জানবো? কেউ কি বলছে আমাকে যে তোর


বউয়ের নাম ওমুক।


এ কথা শুনে মেয়েটি হাসলো।


-আচ্ছা আপনি বিয়ে করতে চান না কেন?


- ভালো লাগে না বিয়ে করতে।


- কিই। কটা বিয়ে করছেন যে অরুচি ধরে গেছে?


- আরে তা না। আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছাই নেই।


- হুম। আমার কথা বাদ দিন। আপনার কথা বলুন। ছেলে


দেখেছেন?


- সরাসরি দেখিনি। ছবি দেখেছি।


- ছেলে পছন্দ হয়ছে?


- হ্যা মোটামুটি।


এভাবে মেয়েটার সাথে অনেক কথা হলো। মেয়েটাকে


পুরো অন্যরকম মনে হলো। এখনকার মেয়েরা অপরিচিত


ছেলেদের সাথে কথাই বলে না। আমি নিজেই ফেসবুকে


মেয়েদের সাথে কথা বলতে গিয়ে কত ব্লক খেয়ছি তার


হিসাব নেই। আর এই মেয়ে আমার সাথে কথা


বলেই চলেছে। তার ফেসবুক আইডিও দিলো। মেয়েটাকে


অনেক ভাল লাগলো আমার। দেখতেও অনেক সুন্দর। ধুর


কি সব বাজে বলছি। একটা মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি আর


বাসে আর একটা মেয়েকে পছন্দ করছি। তাও আবার


বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়ে ।


তালপুর পৌছে মেয়েটাকে আর দেখতে পেলাম না।


অটো নিয়ে কাকুর বাড়ি চলে আসলাম। বাড়ি এসে


দেখলাম এখানে বিয়ে বাড়ির মতো হৈ চৈ শুরু হয়ছে।


আমি যাওয়া মাত্রই আমাকে যেভাবে সবাই ঘিরে


ধরলো মনে হচ্ছে আজই আমার বিয়ে। সন্ধ্যার সময় রুমে বসে আছি। একটা আননোন নাম্বার


থেকে কল আসলো


- হ্যালো


কোনো কথা বলছে না।


- হ্যালো!!!


- হ্যালো........রাজ বলছেন?


- জ্বি বলছি। কে আপনি?


- আমি মেঘ


- কোন মেঘ? এ নামে তো আমি কাউকে চিনি না।


- আপনার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়ছে। আমি সে।


- ও। জ্বি বলুন......কি বলবেন


- (একটু চুপ থেকে) আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়ছে।


- এখনো তো আমি আপনাকে দেখিনি। কি করে বলবো?


চুপ করে আছে। কোন কথা নেই। এক সময় ফোন কেটে


গেলো।


রাতের দিকে কেমন যেন খারাপ লাগতে শুরু করলো।


কাকে যেন মিস করছি। বাসে আসা মেয়েটার কথা মনে


পড়ছে। নাহ এসময় বিয়ে করলে জীবনটাই মাটি হয়ে


যাবে। যে করেই হোক বিয়েটা আটকাতে হবে। মায়ের


সাথে কথা বলতে হবে। কিন্তু মা খুব ব্যস্ত। আমার


সাথে কথা বলার টাইম নেই। তাই সুযোগের অপেক্ষায়


থাকলাম।


- মা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।


- হুম বল


- আমি কালকে মেয়ে দেখতে যেতে পারবো না।


- কেন?


- আমি এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।


- কেন? সমস্যা কি?


- আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি।


- সেটা আগে বলিসনি কেন?


- আরে আমি তো কালকেই মেয়েটাকে পছন্দ করলাম।


- ঠিক আছে আপাতত কালকে মেয়ে দেখতে যাই। এসব


পরে দেখা যাবে।


মেয়ের বাড়ি বসে আছি। মেয়েটি আমার সামনেই বসে


আছে। কিন্তু একবারও আমি মেয়েটার দিকে তাকায়নি।


মাথা নিচু করে আছি। মা বললো


-এই একবার মেয়েটাকে দেখ না। একেবারে পরির মতো


দেখতে।


- আমার পছন্দ হয়নি


- আরে আগে তো মেয়েটাকে দেখ


এমন সময় মেয়েটির জামাইবাবু বললো


-ওদেরকে একটু একা কথা বলতে দেওয়া দরকার।


সবাই তার কথায় একমত হলো। মেয়েটা উঠে চলে গেলো।


আমিও বাধ্য হয়ে পিছুপিছু গেলাম। এখনো মুখ দেখিনি।


একটা ঘরে ঢুকে আমি প্রথম মেয়েটাকে দেখলাম।


দেখেই তো আমার চোখ আকাশে উঠে গেলো। নিজের


চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। এ তো সেই


বাসের মেয়েটা। তাহলে কি এর সাথেই আমার বিয়ে


হচ্ছে।


- তু তুমি......মানে আপনি?


- হ্যাঁ আমি।


- কিন্তু কি করে সম্ভব?


- আসলে বাসে আমি আপনাকে পরিচয় দিনি।


- কেন? (খানিকটা রেগে)


- লজ্জা লাগছিলো তাই। আর নিজের হবু ইয়ের সাথে


একটু মজা করতে চায়ছিলাম।


- হুম!! অচেনা একটা মানুষের সাথে কথা বলতে লজ্জা


লাগে না। আর নিজের পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে?


- ওমা অচেনা হবে কেন। আমি তো আপনার ছবি দেখছি


তাই আপনার সাথে কথা বলেছি। অন্য কেউ থাকলে কথা


বলতাম না।


- কিন্তু বাসে আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনার নাম


দিপা । ফোনে বলেছেন মেঘ। কোনটা


আসল নাম?


- বলবো না। যে ছেলে নিজের হবু ইয়ের নাম জানে না


তাকে আমি বলতে যাবো কেন?


- ও তারমানে আপনি ইচ্ছে করেই আমাকে মিথ্যা নাম


বলেছেন?


- জ্বি না। দুটোই আমার নাম ।


- ইসস কেন যে তোমার...মানে আপনার ছবি দেখলাম না।


এখন কি হবে বলো তো?


- কি আবার হবে...বিয়ে হবে। (লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে)


- কিন্তু আমি তো মাকে বলেছি আমার মেয়ে পছন্দ হয়নি।


- ওহ (মন খারাপ করে)


- আরে তোমার জন্যই তো বলেছি মেয়ে পছন্দ হয় নি।


- মানে?


- মানে হচ্ছে বাসে দিপাকে আমার পছন্দ হয়ছিলো। তাই মেঘকে বিয়ে করতে চায়নি।


- হাহাহাহাহাহাহা।


- এখন তো দুজনকেই পছন্দ হয়ছে কাকে বিয়ে করি?


- যেকোন একজনকে বিয়ে করলেই হবে।


তার সাথে আর কথা বলার সময় পেলাম না। এক সপ্তাহ


পর আমাদের বিয়ে ঠিক হলো।


...


...


...


এক সপ্তাহ পরঃ


রাত ১১টা ১০ মিনিট। ছাদে দাঁড়িয়ে আমি সিগারেট


টানছি। না না আমি সিগারেট খাই না। খুব ভাল ছেলে


আমি। আসলে মেঘের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।


আজ আমাদের ইয়ের রাত...মানে ইয়ের রাত। বোঝেনই তো।


এটা আমার জীবনের প্রথম ইয়ের রাত তাই খুব টেনশন


হচ্ছে। বন্ধুদের কাছে শুনেছি সিগারেট নাকি সব টেনশন


দূর করে দেয়। কিন্তু বন্ধুদের থিউরি আজ ভুল প্রমানিত


হচ্ছে। টেনশন দূর না হয়ে আরো বাড়তেছে।


- কি রে তুই এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে কি করছিস?


- (সিগারেট লুকিয়ে) কিছু না মা এমনি দাঁড়িয়ে


আছি।


- তাড়াতাড়ি ঘরে যা। বউমা একাই বসে আছে।


- আচ্ছা ঠি...ঠিক আছে।


ছাদ থেকে সোজা আমার ঘরের সামনে আসলাম। এবার


টেনশন দিগুন হয়ে গেছে। দরজার সামনে দশ মিনিট


পায়াচারি করলাম। হঠাৎ ঘরের দরজা খুলে গেলো।


মেঘ রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।


- কি ব্যাপার আপনি ঘরে ঢুকবেন না আমি দরজা


লাগিয়ে দেব?


- ইয়ে দরজা লাগিয়ে দাও...মানে দিন।


আবার সেই রাগি লুক দিল। আমি কিছু না বলে ঘরে ঢুকে


গেলাম। এবার একটু সাহস নিয়ে বললাম


- আই লাভ ইউ


- কি বললেন?


- কিছু না।


- আমি শুনেছি কি বলেছেন। এভাবে বললে হবে না।


ভালোভাবে প্রপোজ করুন।


- এখন?


- হুম


- কালকে করি?


- নাহ এখনই করতে হবে।


- আচ্ছা ঠিক আছে আমার হাতটা একটু শক্ত করে ধরো।


- না পারবো না।


- তাহলে আমিও প্রপোজ করতে পারবো না।


- আচ্ছা ধরলাম


- ছোটবেলায় শাশুড়িমা তোমাকে হরলিক্স খাওয়ায়নি?


- কেন?


- তোমাকে শক্ত করে ধরতে বলেছে, স্পর্শ করতে বলিনি।


- আচ্ছা ধরলাম।


- আচ্ছা


- কি আচ্ছা? করুন প্রপোজ।


- হুম করছি তো। মেঘ


- হুম


- মেঘ


- হুম


- আমি...


- হুম


- তো...তো...তোমাকে...


- হুম


- তোমাকে...


- তারপর?


- তোমাকে...


- তোমাকে কি?


- আমি একটু জল খাবো, একটু জল দাও...


মেঘ হাত ছেড়ে দিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে গেলো।


আমিও গিয়ে শুলাম। এরপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।





একটি মিষ্টি প্রেমের কাহিনী।

 

সারাদিন অফিসের কাজে ব্যাস্ত থাকার স্বামীর সাথে খুব একটা কথা বলার সুযোগ হয়না তপতীর,,,,

কিন্তু অফিস শেষে বাড়ি ফেরার সময় তার স্বামী তাকে রোজই একবার কল করবে।এমনই এক মেঘাচ্ছন্ন সন্ধ্যা বেলায় আকাশ তার তপতীকে কল করলো। অভিমানে মুখ ভারী করা বউ কল রিসিভ করেই বললো,

-- আমার খোঁজ-খবর তো আর আপনার রাখতে হবেনা।সারাদিন একা বাড়িতে কি করি না করি তাতো আপনি বুঝবেন না।থাকুন আপনি আপনার অফিস নিয়ে।

এই কথা গুলো তপতী তার স্বামী আকাশকে প্রতিদিনই শোনায়। সব অভিমান শুনে ক্লান্ত স্বামী হেসে উত্তর দিলো,

-- রাগ করিস না বউ।এইতো এখনি বাড়ি ফিরবো।

-- আচ্ছা।আমার জন্য কি নিয়ে আসবেন?

-- সারা শরীরের ঘাম আর এক পকেট ভালোবাসা।

.

খুনসুটির আলাপ শেষে বাড়ির রান্না করার জন্য টুকটাক জিনিসপত্রের নাম বললো।শেষে আকাশকে সাবধানে বাড়ি ফেরার কথা বলে কল কাটলো।

অনেক মেঘ আকাশে,বৃষ্টি আসবে কিছুক্ষনের মধ্যেই।

আকাশ খিচুড়ির সাথে অমলেট খুব পছন্দ করে এই কথা তপতীর মনে পরতেই রান্না ঘরে ঢুকে সব গুছিয়ে রান্না সেড়ে টেবিলে সাজিয়ে রাখলো।তারপর নিজে একটু পরিপাটি হয়ে চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিয়ে চুল খোঁপা করে বারান্দায় বসে অপেক্ষা করে আকাশের বাড়ি ফিরে আসার।

কিছু সময় পর বাড়ির সামনে রিকশা থেকে আকাশকে নামতে দেখেই দৌড়ে নিচে চলে গেলো।আকাশের হাতের বাজারের ব্যাগটা নিয়ে একসাথে বাড়গ আসলো।বৃষ্টিতে আকাশের শরীর খানিকটা ভিজে গেছে। শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের জল মুছতে মুছতে তপতী বলে,

-- ছাতা তো আপনার সাথেই থাকে তাও ভিজে আসেন কেনো?

উত্তরে আকাশ বলে,

-- না ভিজলে তো তোমার আঁচলের গন্ধ এখন শরীরে লাগাতে পারতাম না।

তপতী লজ্জা পেয়ে সরে যেতে চাইলে হাত চেপে ধরে আকাশ বলে,

-- এখন একটু আমার পাশে বসো।সারাদিন তো বাড়ি থাকিনা এই নিয়ে তোমার অভিযোগের শেষ নেই।এখন যাচ্ছো কোথায়?

-- আপনার শার্ট ভিজে গেছে চেঞ্জ করুন তারপর অন্য কথা।যাই দেখি বাজারের ব্যাগে কি নিয়ে আসলেন।গুছিয়ে রেখে আসি।

-- না এখন যাবেনা,,,( এই বলে আকাশ পকেট থেকে টিপের পাতা বের করে তপতীর কপালে পরিয়ে দিয়ে বলে),,,গত দুইদিন তোমার কপালে টিপ দেখিনি। শেষ হয়ে গেলেও আমাকে বলোনা কেনো?

তপতী তখন মুচকি হেসে বলে,

-- আমার টিপ ছাড়া কপাল আপনার নজরে ঠিক ই পরবে আর সময় করে নিয়ে আসবেন তাও জানি।সেজন্যই বলিনা। এবার ফ্রেশ হয়ে নিন আমি টেবিলে খাবার রেডি করি।

-- আচ্ছা যাচ্ছি।

স্নান করে টেবিলে গিয়েই দেখলো আজকে খিচুড়ি আর অমলেট রান্না করে রাখা।আকাশ তখন চেয়ারে বসে থাকা তপতীকে হাত ধরে উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে বললো,

-- এতো ভালোবাসিস কেনো বউ আমাকে?

-- আপনার চেয়ে বেশি তো বাসতে পারিনা।

-- নারে তপতী খুব কপাল করে তোর মতো বউ পেয়েছি।সারাজীবন এভাবে বুকে আগলে রাখবো।

-- হড়ছে হয়ছে।চলুন খেয়ে নি এখন।

-- আসো তপতী আজকে আমি খাইয়ে দেবো তোমাকে।

তপতী খুশি হয়ে বলে ,,,

-- আচ্ছা তাহলে তো খুব ভালো হয়।

.

কথা বলতে বলতে দুজন খেয়ে নিলো। থালাবাসন পরিষ্কার করার সময়টুকুতে আকাশ একটু ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।সব কাজ শেষ করে তপতী রুমে এসে কপালের টিপটা আয়নাতে লাগিয়ে রাখলো।হাতের চুড়ি খুলে রাখতে রাখতে আকাশকে বলে

-- দেখুন বাইরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে।

আকাশ ল্যাপটপ সাইডে রেখে বলে,,

-- চলো বারান্দায় যাই।

.

বারান্দা দিয়ে দুজন একসাথে হাত বাড়িয়ে দিলো।আকাশ হাতে বৃষ্টির জল নিয়ে তপতীর মুখে ছুড়ে মারলে তপতীর চোখ বন্ধ হয়ে আসে,বাতাসে চুল এলেমেলো হয়ে যায়।মুখের উপরের চুল গুলো ভেজা হাতে সরিয়ে দিয়ে তপতীর কপালে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে রাখে।

-- চলো তপতী রুমে গিয়ে শুয়ে পরি।

-- চলুন যাই।

বাইরে প্রচন্ড বাজ পরার শব্দে স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে রাখা বউকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আকাশ।

-- জানো তপতী তোমাকে যখন বুকে জড়িয়ে রাখি সারাদিনের ক্লান্তি একটুও থাকেনা,,,

সকালে ঘুম ভাঙার পর তপতী কিছুক্ষণ আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে।তারপর কপালে চুমু খেয়ে সকালের জলখাবার বানাতে চলে যায়।

জানালার পর্দা সরাতেই আকাশের ঘুম ভেঙে গেলো।তপতী পাশে এসে বসতেই আকাশ বুকে চেপে ধরে কপালে চুমু খেয়ে নিলো।

-- যান এখন স্নান করে নিন তারপর জলখাবার করবেন। অফিসের সময় হয়ে গেলো সে খেয়াল নেই তো আপনার।

জলখাবার শেষ করে এখন আকাশ অফিসের উদ্দেশ্য রওনা হবে।শার্টের বোতাম লাগিয়ে দেওয়ার সময় তপতী বলে,

-- তারাতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবেন।সাবধানে রাস্তা পার হবেন।আর দুপুরের খাবার ব্যাগে দেওয়া আছে সময় মতো খেয়ে নেবেন।

বউয়ের গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে আকাশ বেড়িয়ে গেলে আবার সেই বারান্দায় গিয়ে তপতী রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে।দূর থেকে হাতের ইশারায় আকাশের গাড়ি ভীড়ের মাঝে হারিয়ে যায়। তপতী বারান্দায় কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে ঘরে এসে নিজের কাজ করে।আর ভাবতে থাকে আজকে হয়তো বাড়ি ফেরার সময় আকাশ তার জন্য গোলাপ ফুল নিয়ে ফিরবে।

*********************সমাপ্ত********************

"""চারপাশে এতো পরকীয়া,এতো অবিশ্বাস,ডিভোর্স।তবুও এর মাঝে তপতী এবং আকাশদের প্রেমের সংসার প্রেমময় হয়েই যুগের পর যুগ টিকে থাকে।তাদের বেঁচে থাকার প্রার্থনায় দুজন একসাথেই বৃদ্ধ হয়।""""""

অচিন মানুষ

   আকাশ ধাক্কা সামলিয়ে অপেক্ষায় দিন সময়গুলো বিয়ের আয়োজন  বাড়ির বাইরে এসে কাজ নেই, কলেজ বন্ধ ঠিক যেনো দুর্ভিক্ষের পূর্ব মূহুর্ত । ঠি...